জাদুঘর কাকে বলে ? অতীত পুনর্গঠনে যাদুঘরের ভূমিকা আলোচনা কর।

জাদুঘর:


শব্দের বুৎপত্তি: বাংলা জাদুঘর শব্দটির ইংরেজি প্রতিশব্দ হল Museum মিউজিয়াম শব্দের মূল উৎস হল প্রাচীন গ্রিক শব্দ Mouseion যার অর্থ হল গ্রিক পুরানের শিল্পকলার পৃষ্ঠপোষক মিউজদের মন্দির।

বাংলা অ্যাকাডেমির অভিমত: পশ্চিমবঙ্গ অ্যাকাডেমির 'অ্যাকাডেমি বিদ্যার্থী বাংলা অভিধান' অনুসারে যে ঘরে নানা অত্যাশ্চর্য জিনিস বা প্রাচীন জিনিস সংরক্ষিত থাকে তাই হল জাদুঘর।

আন্তর্জাতিক জাদুঘর পর্ষদের অভিমত:- International Council of Museums বা ICON এর মতে, জাদুঘর হল অলাভজনক, জনসাধারণের কাছে উন্মুক্ত এবং স্থায়ী সমাজসেবামূলক প্রতিষ্ঠান যা শিক্ষালাভ, জ্ঞানচর্চা ও আনন্দলাভের উদ্দেশ্যে মানব ঐতিহ্যের স্পর্শযোগ্য ও স্পর্শতাযোগ্য জিনিসপত্র সংগ্রহ করে। সংরক্ষণ করে প্রদর্শন করে এবং সেগুলি নিয়ে গবেষণা করে।

এনসাইক্লোপিডিয়া ব্রিটানিকা:- এনসাইক্লোপিডিয়া ব্রিটানিকা (Vol 8, Page 440) তে উল্লেখ আছে। মানুষের ইচ্ছায় নানা কৌতূহলোদ্দীপক সুন্দর সুন্দর বস্তু মিউজিয়াম বা যাদুঘরে সংরক্ষিত হয়ে থাকে।

সাধারণ সংজ্ঞা: বস্তুত জাদুঘর হল বিভিন্ন ঐতিহাসিক উপাদানের সংগ্রহশালা, যেখানে ঐতিহাসিক, সাংস্কৃতিক, বৈজ্ঞানিক, শিল্প বিষয়ক প্রভৃতি বিভিন্ন ধরনের গুরুত্বপূর্ণ নিদর্শন সংরক্ষণ করে তা জনসাধারণের উদ্দেশ্যে স্থায়ী বা অস্থায়ীভাবে নিদর্শনের ব্যবস্থা করা হয়। অর্থাৎ জাদুঘর হল এমন একটি প্রতিষ্ঠান বা ভবন যেখানে অতীতের বহু বস্তুকে রক্ষণাবেক্ষণ ও ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ করা হয়।

অতীত পুনর্গঠনে জাদুঘরের ভূমিকা:-  অতীতকালের সময়কে তুলে ধরার ক্ষেত্রে জাদুঘরগুলির গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। যেমন-

1. প্রত্ন নিদর্শন সংগ্রহ: জাদুঘরের একটি প্রধান উদ্দেশ্য হল বিশ্বের হারিয়ে যাওয়া অতীত দিনের সমস্ত নিদর্শনগুলি সংগ্রহ করে প্রত্ননিদর্শন কেন্দ্রিক বিষয়গুলির ধারণা দান করা।

2. প্রত্ননিদর্শন সংরক্ষণ: জাদুঘরগুলি সুপ্রাচীন অতীত দিনের প্রত্ননিদর্শনগুলি যেমন, প্রাচীন মুদ্রা, লিপি, ভাস্কর্য, মূর্তি, চিত্রকলা, দুষ্প্রাপ্য পুরাতাত্ত্বিক বস্তুসমূহ এবং বিভিন্ন মডেল চার্ট সংরক্ষণ করে থাকে।

3. প্রতিকৃতি নির্মাণ: অতীতদিনের যে নিদর্শনগুলি দুষ্প্রাপ্য অথচ মূল্যবান সেগুলির প্রতিকৃতি নির্মাণ, আধুনিক ঐতিহাসিক নিদর্শন বা ক্রিয়াকলাপ বা বস্তুসমূহের বা ব্যক্তিসমূহের মডেল (Replica) নির্মাণ করে জাদুঘরগুলি দর্শকদের দেখানোর জন্য সেগুলি সাজিয়ে রাখে।

4. অতীত সমাজ সভ্যতার ধারণা দান: বিবর্তনের মধ্য দিয়ে মানব সমাজ ও সভ্যতার যে অগ্রগতি ঘটেছে তার বিভিন্ন নিদর্শন ও স্মৃতিচিহ্নের আভাস মেলে জাদুঘরে সংরক্ষিত বিভিন্ন প্রত্ননিদর্শনগুলি থেকে।

5. স্মরনীয় ব্যক্তিত্বদের সংগ্রহশালা নির্মাণ: বিশ্বের বেশ কয়েকটি জাদুঘরকে বিশ্বের জনপ্রিয় ও স্মরনীয় ব্যক্তিত্বদের মূর্তির সংগ্রহশালা হিসাবে গড়ে তোলা হয়েছে। যেমন, মাদাম তুসোর জাদুঘরটিতে রাজকীয় ব্যক্তিত্ব, ক্রীড়াতারকা, বিশ্বের বিভিন্ন দেশের রাজনৈতিক নেতৃবর্গ, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব এমনকি চলচ্চিত্রের জনপ্রিয় নায়ক-নায়িকাদের মোমের মূর্তি সংরক্ষিত রয়েছে।

6. জনসচেতনতা গঠন: জাদুঘরে সংরক্ষিত ঐতিহাসিক, বৈজ্ঞানিক শৈল্পিক গুরুত্বসম্পন্ন প্রত্ননিদর্শনগুলি যেমন দর্শকদের মনে সচেতনতা আনে তেমন পন্ডিত, গবেষকরাও তাদের লেখার কাজে বা গবেষণার কাজে ব্যবহার করে থাকেন সেগুলি।

7. জ্ঞানের প্রসার: জাদুঘরে সংরক্ষিত প্রত্ননিদর্শনগুলির পাশে নানা ধরনের তথ্য লিপিবদ্ধ থাকে সেই নিদর্শনগুলি সম্পর্কে। ফলে দর্শককূল ওই নির্দিষ্ট বস্তু সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা পায় ও জ্ঞানের প্রসার ঘটে।

৪. অতীত ইতিহাসের পুনরাবির্ভাবের সাহায্য: জাদুঘরে সংরক্ষিত বিভিন্ন গ্রন্থ ও ঐতিহাসিক নিদর্শন অতীত ইতিহাসের পুনরাবির্ভাবে সাহায্য করে। বইয়ের পাতা থেকে উঠে আসা এই সমস্ত নিদর্শনগুলি আমাদের ইতিহাসকে প্রানবন্ত করে তোলে।

       বস্তুত অতীত দিনের নিদর্শনগুলি সাধারণ পাঠক, দর্শক ও গবেষকদের সামনে অজানাকে জানার, আচেনাকে চেনার, সেই বস্তু সম্পর্কে সঠিক ধারণা লাভ ও জ্ঞান লাভের মূর্তি প্রতীক হয়ে ওঠে যেগুলি জাদুঘরে সংরক্ষিত থাকে। তাই বলা যায় জাদুঘর অতীত ইতিহাসের পুনরাবির্ভাবে সাহায্য করে থাকে।



একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

নবীনতর পূর্বতন