ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামে ইন্ডিয়ান ন্যাশনাল আর্মির ভূমিকা মূল্যায়ন করো।

ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামে আই.এন. এ.-র ভূমিকা:


ভূমিকা : আজাদ হিন্দ ফৌজের বীর সেনাদের আত্মত্যাগ ও সংগ্রামী মানসিকতার দ্বারা উজ্জীবিত হয়ে ব্রিটিশ নৌবাহিনীর ভারতীয় সেনারা বিদ্রোহ ঘোষণা করে যা ভারতের স্বাধীনতাকে ত্বরান্বিত করে। গান্ধিজি বলেছিলেন- যদিও আজাদ হিন্দ ফৌজ তাদের লক্ষ্যে পৌঁছোতে পারেনি, কিন্তু তারা এমন কিছু করেছে যার নিজেরা গর্ববোধ করতে পারে। আজাদ হিন্দ বাহিনী যে বীরত্বপূর্ণ সংগ্ৰাম চালিয়েছিল তার গুরুত্ব ছিল অত্যন্ত সুদূরপ্রসারী।

[1]সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি স্থাপনে : মাতৃভূমি ছেড়ে বহু দূরে বিদেশের মাটিতে দাঁড়িয়ে একই পতাকার নীচে ধর্ম ও জাতিভেদ ভুলে মাতৃভূমির মুক্তিযজ্ঞে যেভাবে সকল সম্প্রদায়ের সেনা কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে লড়াই চালিয়েছিল তা ছিল সাম্প্রদায়িক ঐক্যের সবচেয়ে বড়ো নিদর্শন।

[2] নৌবাহিনীতে প্রভাব: আজাদ হিন্দ সেনাদের চান আতা ও বীরত্বপূর্ণ পড়াই ব্রিটিশ নৌবাহিনীতে ভারতীয় নৌসেনাদের বিদ্রোহী মনোভাব জাগিয়ে তুলতে সাহায্য করেছিল। যার ফলে ঘটে যায়, নৌবিদ্রোহ। নৌবিদ্রোহের পরেই ভীত হয়ে ব্রিটিশ পার্লামেন্টের নেতা অধ্যাপক রিচার্ডস প্রধানমন্ত্রী এটলিকে বলেন – আমাদের এখনই ক্ষমতা হস্তান্তর করে ভারতবর্ষ ত্যাগ করে চলে আসা উচিত। আমরা যদি আর সময় নষ্ট করি, তাহলে ভারতীয়রা আমাদের লাথি মেরে তাড়িয়ে দেবে।

[3]স্বাধীনতার সমস্যা আন্তর্জাতিক স্তরে উত্থাপনে: ভারতের স্বাধীনতার প্রশ্ন আজাদ হিন্দ বাহিনীর জন্যই আন্তর্জাতিক প্রসঙ্গে রূপান্তরিত হয়। দীর্ঘদিন ধরে ভারতের স্বাধীনতাকে অবদমিত করে রেখে ব্রিটিশ সরকার যে অন্যায় করে আসছিল এ সত্য বিশ্ববাসীকে অনুভব করানোর কৃতিত্ব আজাদ হিন্দ বাহিনীর প্রাপ্য। ঐতিহাসিক তারাচাঁন বলেছেন—সুভাফল ব্রিটিশ রাজত্বকালে ভারতবর্ষের সমস্যাগুলিকে জাতীয় স্বর থেকে আন্তর্জাতিক রাজনৈতিক সমস্যায় উন্নীত করেছিলেন।

[4] বিদেশের মাটিতে বৃহত্তর সংগ্রামে : আজাদ হিন্দ বাহিনীর সংগ্রামই ছিল বিদেশের মাটিতে দাঁড়িয়ে ভারতের স্বাধীনতার জন্য সবথেকে বড়ো মুক্তিসংগ্রাম। আজাদ হিন্দ সেনাদের এই লড়াই অর্ধনগ্ন ও দরিদ্র ভারতবাসীকে শিরদাঁড়া সোজা করে দাঁড়াতে শিখিয়েছিল।

[5] ভারতবাসীর দেশাত্মবোধের উজ্জীবনে : যুদ্ধবন্দি আজাদ হিন্দ সেনাদের বিচারের জন্য দিল্লির লালকেল্লায় নিয়ে যাওয়া হয়। বিচার চলাকালীন তাদের বীরত্বপূর্ণ আত্মত্যাগ ও সংগ্রামের কাহিনি যত প্রকাশিত হতে থাকে ততই আপামর ভারতবাসী দেশাত্মবোধে উদ্‌বুদ্ধ ও উজ্জীবিত হতে শুরু করে। এই পরিস্থিতিকে পেন্ডাবেল মুন আগ্নেয়গিরির কিনারার সঙ্গে তুলনা করেছেন।

উপসংহার: সুভাষচন্দ্র ও আজাদ হিন্দ সেনাদের ভারতের অভ্যন্তরে অগ্রসর একদিকে যেমন ব্রিটিশ সরকারের দুর্বলতা প্রমাণ করেছিল, অন্যদিকে তেমনি ভারতের স্বাধীনতাকে ব্রিটিশের সংকীর্ণ ঔপনিবেশিক প্রশ্ন থেকে আন্তর্জাতিক রাজনীতির ময়দানে পৌঁছে দিয়েছিল। জন কোনেলের মতে— আজাদ হিন্দ ফৌজের ঘটনা সারা ভারতে কেবল আবেগকে উদ্‌বলিত করেনি, সেনাবাহিনীর প্রধান ও বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ পদাধিকারীদেরও গভীরভাবে প্রভাবিত করেছিল।




একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

নবীনতর পূর্বতন