সঙ্গম সাহিত্য
সংস্কৃত সাহিত্য ছাড়াও তামিল সাহিত্য থেকে দক্ষিণ ভারতের ইতিহাস রচনার জন্য মূল্যবান তথ্য সংগ্রহ করা হয়ে থাকে। এই তামিল সাহিত্য ইতিহাসে সঙ্গম সাহিত্য নামেই সমধিক প্রসিদ্ধ। ‘সঙ্গম’ বলতে বোঝাত তামিল কবিদের সংঘ বা সম্মেলনকে। এই সংঘ বা সম্মেলন সম্ভবত রাজা অথবা সর্দারের আনুকূল্যে আয়োজিত হত। যীশুখ্রিস্টের জন্মের পরে প্রথম কয়েক শতাব্দীর শাসকবর্গের সম্বন্ধে সঙ্গম সাহিত্যে তথ্য পাওয়া যায়। সঙ্গম সাহিত্যের সঠিক সময়কাল নিয়ে বিতর্ক থাকলেও অধিকাংশ সংকলন আনুমানিক ৩০০ থেকে ৬০০ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে সম্পূর্ণ হয়েছিল বলে মনে করা হয়। এতদসত্ত্বেও সঙ্গম যুগ বলে চিহ্নিত করা হয়ে থাকে যীশুখ্রিস্টের জন্মের কয়েকশো বছর আগে থেকে তার জন্মের কয়েকশো বছর পর পর্যন্ত সময়কালকে। সঙ্গম সাহিত্যকে ‘আখ্যান’ ও ‘উপদেশাবলী’-প্রধানত এই দুটি ভাগ করা হয়ে থাকে। এই গ্রন্থগুলি থেকে কর সংগ্রহের পদ্ধতি, বিচার ব্যবস্থা এবং বণিক, শিল্পী ও কৃষকদের সম্পর্কে নানা তথ্য আহরণ করা সম্ভব হয়ছে। নগরায়ণ সংক্রান্ত কিছু তথ্যও পাওয়া যায় এগুলি থেকে। কাঞ্চী, কাবেরীপত্তনম, মাদুরা প্রভৃতি নগরগুলির উল্লেখ এতে আছে। বিভিন্ন সামাজিক ও ব্যবসায়িক শ্রেণীর আচার-আচরণ বর্ণিত হয়েছে এগুলিতে।
তামিল ভাষায় লেখা যীশুখ্রিস্টের জন্মের পরবর্তী কয়েক শতকের মধ্যে রচিত দুটি প্রসিদ্ধ তামিল মহাকাব্য হলো ‘সিলপ্পদিকারম’ ও ‘মণিমেকলই’। প্রথমটি রচনা করেছেন ইলঙ্গো অদিগল ও দ্বিতীয়টির লেখক মাদুরাই-এর কবি সিওলৈ সাত্তনার । ‘সিলপ্পদিকারম’-এ মাদুরা নগরের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি এবং মাদুরা ও কাবেরীপত্তনমের নারীজাতির অবস্থা ও অভিজাতবর্গের জীবন সংক্রান্ত বর্ণনা আছে। এর থেকে স্বাভাবিকভাবেই সংলগ্ন অঞ্চলের অর্থনৈতিক ও সামাজিক অবস্থা সম্পর্কে বোঝা সম্ভব হয়। দ্বিতীয়টি অর্থাৎ ‘মণিমেকলৈ’ মহাকাব্যটি হল প্রকৃতপক্ষে সিলপ্পদিকারমের পরবর্তী অংশ বা এর পরিপূরক। এতে দক্ষিণ ভারতের আর্থ-সামাজিক অবস্থার পাশাপাশি হিন্দু ধর্ম ও এর বিরোধী ধর্ম সম্প্রদায়গুলি বিশেষত বৌদ্ধ ধর্মের অবস্থান সম্পর্কে তথ্যাদি লিপিবদ্ধ হয়েছে। এছাড়াও তামিল গ্রন্থ তোকলিয়ম-এ তামিল ব্যাকরণ ও অলঙ্কার শাস্ত্রের পরিচয় পাওয়া যায় শুধু তাই নয়, সমকালীন দক্ষিণ ভারতীয় সমাজ সম্পর্কেও কিছু তথ্য আহরিত হয়ে থাকে এই গ্রন্থটি থেকে।