কনকর্ডাট বা ধর্মীয় মিমাংসা চুক্তি
সংবিধান সভা প্রবর্তিত সিভিল কনস্টিটিউশন অব দি ক্লার্জি বা যাজকদের সংবিধানের প্রয়োগ ঘটিয়ে (১৭৯১ খ্রি.) ফ্রান্সের গির্জাগুলিকে জাতীয়করণ করা এবং গির্জার সমস্ত সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করা হলে রাষ্ট্রের সঙ্গে পোপের সংঘাত বাধে। সে সময়ে খ্রিস্টান জগতে এই ঘটনার বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। ফলে নেপোলিয়ন রাজনৈতিক গুরুত্বের বিচারেই পোপের সঙ্গে চুক্তির মাধ্যমে ধর্মীয় সমস্যার মীমাংসা চেয়েছিলেন। চুক্তিটি ইতিহাসে কনকর্ডাট নামে খ্যাত। ঐতিহাসিক কোব্যানের মতে— কনকর্ডটি ছিল নেপোলিয়ন বোনাপার্টের একটি বিশাল জয় এবং তাঁর সুনিপুণ রাজনীতির পরিচায়ক ।
রাষ্ট্রের সঙ্গে পোপের সংঘাতের মীমাংসার লক্ষ্যে নেপোলিয়ন বোনাপার্ট ও পোপ সপ্তম পায়াসের মধ্যে এক ধর্মীয় মীমাংসা চুক্তি স্বাক্ষরিত হয় ১৮০১ খ্রি.। এই ধর্ম মীমাংসা চুক্তি বা কনকর্ডাট রাষ্ট্রের সঙ্গে পোপের সম্পর্ককে পুনরায় সহজ ও স্বাভাবিক করে তোলে। এই চুক্তির ধারাগুলি ছিল—① পোপ ফরাসি গির্জার জাতীয়করণ এবং গির্জার যাবতীয় সম্পত্তির রাষ্ট্রীয়করণ মেনে নেবেন। ② রোমান ক্যাথোলিক গির্জা ও রোমান ক্যাথোলিকের ধর্মমতকে ফরাসি সরকার স্বীকৃতি দেবে। ③ ফ্রান্সের ধর্মযাজকরা এখন থেকে ফরাসি সরকারের দ্বারা মনোনীত হবেন। আর পোপ তাঁদের আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি জানাবেন। ④ ফরাসি সরকার যাজকদের বেতন দেবে। ⑤ যাজকদের ওপর বিশপদের আধিপত্য স্বীকৃতি পাবে। ফ্রান্সকে ৫০টি যাজকগোষ্ঠীতে ভাগ করে ১০ জন আর্চ বিশপকে নিয়োগ করা হবে। ⑥ গ্যালিকান চার্চ এবং ভ্যাটিকান চার্চের মধ্যেকার মতবাদের সমন্বয়সাধন করা হবে।
এই ধর্মীয় চুক্তির ফলে চার্চ অনেকটাই রাষ্ট্রের ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়ে। ফ্রান্সে ধর্মীয় ক্ষেত্রে সহনশীলতার আদর্শ গৃহীত হওয়ায় অন্যান্য ধর্মের মানুষ স্বাধীন ধর্মাচারণের অধিকার লাভ করে। আসলে নেপোলিয়ন এই ধর্মীয় মীমাংসা চুক্তির মাধ্যমে সুচারুভাবে চার্চের ওপর রাষ্ট্রের কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করতে চেয়েছিলেন। যার পরিণতিস্বরূপ পরবর্তী সময়ে রাষ্ট্র ও চার্চের মধ্যেকার বিবাদ দীর্ঘস্থায়ী হয়েছিল।