ক্লুনির সংস্কার আন্দোলন
খ্রীষ্টীয় দশম শতক ইউরোপে সংস্কারের শতক। যে সংস্কার কার্য প্রথম শুরু হয় মঠগুলিতে। এক্ষেত্রে সর্বাধিক উল্লেখযোগ্য ৯১০ খ্রীস্টাব্দে ধর্মপ্রাণ ডিউক উইলিয়াম কতৃক প্রতিষ্ঠিত বার্গাণ্ডির ক্লুনির মঠের সংস্কার কার্যাবলী। ক্লুনির প্রভাব ও প্রসিদ্ধি ছিল দূর বিস্তৃত, সুগভীর এবং দীর্ঘস্থায়ী যা সমগ্র মহাদেশে ছড়িয়ে পড়ে। প্রথম থেকেই এই মঠ ছিল স্বাধীন, স্বয়ংসম্পূর্ণ ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান। রাজতন্ত্র বা সামন্ততন্ত্র এখানে প্রভাব বিস্তারের সুযোগ পায়নি।
ক্লুনির সংস্কারে প্রাধান্য পেয়েছিল বেনেডিকটিয় উপাসনা পদ্ধতি এং ধর্মীয় শুদ্ধাচার। ঈশ্বর আরাধোনা, প্রার্থনা সঙ্গীত এবং ভগবৎ প্রেম ছিল ক্লুনির আদর্শ। এই মঠের ধর্মীয় পরম্পরা এবং নিষ্ঠা ছিল বিস্ময়কর। কারণ পার্থিব শক্তি অর্জনে ক্লুনির কোন উৎসাহ ছিল না। চার্চের অনাচারের প্রতিবাদ, যাজকদের ধর্মীয় বিচ্যুতি প্রতিরোধ, বিশপদের গীর্জার বিপুল সম্পত্তি ভোগ দখল, বিশপ পদ ক্রয়-বিক্রয়, বিবাহিত ব্যাক্তিদের যাজক পদ লাভ এবং মঠ জীবনের উপর রাজা বা সামন্তদের প্রভাব বিস্তারের মত কু-কর্মের প্রতিবাদ স্বরুপ ক্লুনির সংস্কার আন্দোলনের সূচনা। যে আন্দোলনের আদর্শ ছিল-(১) লৌকিক নিয়ন্ত্রন থেকে মুক্তি ও লৌকিক জগতের প্রতি উদাসীন থাকা, (২) স্বাধীনভাবে অ্যাবট নিয়োগ, (৩) সামন্তপ্রভু বা দেশের শাসকের প্রভাব মুক্ত থাকা, (৪) বেনেডিস্টিয়ান পদ অনুসারে পোপের নিয়ন্ত্রনে থেকে অন্তরমুখি কাজকর্ম সম্পন্ন করা, (৫) পোপ ও সম্রাটের দ্বন্দ্বে যোগ না দেওয়া, (৬) সমাজের সর্বস্তরের সকল মঙ্গলকাজে যুক্ত থাকা, (৭) মঠের হৃত সম্পত্তি পুনরুদ্ধারের অনমনীয় মনোভাব গ্রহণ এবং নিজ শাখা প্রতিষ্ঠান গুলিকে একই পথে পরিচালনা।
ক্লুনির এই আদর্শের কারনে পোপ এই সংস্কার আন্দোলনকেও আদর্শ পোপতন্ত্রের কার্য বলে তুলে ধরেছিল। লক্ষ্য, আদর্শ, মতবাদ ও কর্ম পদ্ধতির অভাবিত আদর্শ ক্লুনির মঠকে পথ প্রদর্শকে পরিণত করেছিল চার্চের সংস্কারকদের নিকট। তাই ক্লুনির সংস্কার আন্দোলন দ্রুত বার্গাণ্ডি থেকে ফ্রান্স ও স্পেন, লোরেণ থেকে ইংলণ্ড এবং জার্মানী ও ইতালি পর্যন্ত প্রভাব বিস্তার করেছিল। ফলে দ্বাদশ শতকের মধ্যে ইউরোপে ক্লুনির প্রায় ৩০০ টি কেন্দ্র স্থাপিত হয়।