নিয়েনডার্থাল কারা ?

নিয়েনডার্থাল

নিয়েনডার্থাল কারা ?

         অন্তর্বর্তী প্রাচীন প্রস্তর যুগে আধুনিক হোমো স্যাপিয়েন্সের আবির্ভাব হলেও নিয়েনডার্থাল সংস্কৃতিই এই যুগের প্রধান চারিত্রিক লক্ষণ। আধুনিক মানুষের সঙ্গে নিয়েনডার্থাল মানুষের সাদৃশ্য এবং বৈসাদৃশ্য এখনও যথেষ্ট বিতর্কের বিষয়। অনেকেই মানুষের সঙ্গে এদের সাদৃশ্যের দিকটিকেই প্রধান বলে মনে করেন। তাদের মতে নিয়েনডার্থালরা আধুনিক মানুষেরই একটি উপপ্রজাতি এবং তাদের বৈজ্ঞানিক নামকরণ হওয়া উচিত হোমো স্যাপিয়েন্স নিয়েনডার্থালেনসিস। বিপরীত গোষ্ঠীর বক্তব্য অনুযায়ী স্যাপিয়েন্স শব্দটি কেবল আধুনিক মানব প্রজাতির জন্যই ব্যবহার করা উচিত। নিয়েনডার্থাল মানুষকে হোমো নিয়েনডার্থালেনসিস হিসেবেই চিহ্নিত করা উচিত।

       আধুনিক মানুষের তুলনায় নিয়েনডার্থাল মানুষের শারীরিক গঠন ছিল আরও শক্তিশালী ও খর্বকায়। কিছুটা অতিরিক্ত ঠান্ডা অঞ্চলের অধিবাসীদের (এস্কিমো বা ইনুইট) মতো।গঠন থেকে বোঝা যায় হোমো নিয়েনডার্থালেনসিসদের দৈহিক শক্তি আধুনিক মানুষের তুলনায় বেশি এবং এরা ঠান্ডার সঙ্গে খাপ খাইয়ে নেওয়ার জন্য আধুনিক মানুষের তুলনায় শারীরিকভাবে বেশি সক্ষম ছিল। তাদের খুলির গড়ন লম্বাটে। আধুনিক মানুষের তুলনায় বেশি শক্তপোক্ত খুলি। কপাল পিছনের দিকে হেলে পড়া, চিবুকের প্রায় অস্তিত্ব নেই। হোমো ইরেকটাসদের মতোই স্পষ্ট ও উঁচু ভ্রু-শিরা। যদিও সমস্ত কপাল জুড়ে একটি ভূ-শিরার বদলে দুই চোখের উপরে দুটি অর্ধচন্দ্রাকৃতি ভূ-শিরা। মোলার বা কশের দাঁতগুলি বড়ো। সামনের দাঁত গুলিতে ক্ষয়ের চিহ্ন পাওয়া গেছে। এ থেকে মনে হয় খাবার খাওয়া ছাড়াও কিছু চেপে ধরা বা টেনে ছেঁড়ার জন্য ওই দাঁতের ব্যবহার হত। হোমো নিয়েনডার্থালেনসিসদের মস্তিষ্কের আয়তন 1200 থেকে 1700 সিসি, যা হোমো ইরেকটাসদের তুলনায় অনেকটাই বড়ো। তবে তাদের বোধশক্তি বা চেতনা আধুনিক মানুষের মতো উন্নত ছিল কিনা তা নিশ্চিতভাবে বলা সম্ভব হয়নি। 

      নিয়েনডার্থালরা অ্যাসুলিয়ান প্রক্রিয়ায় যে হাতকুঠার তৈরি করত, তা নানাধরনের কাজে ব্যবহার করত। বিপরীত পক্ষে লেভালোয়া প্রক্রিয়ার মাধ্যমে আলাদা আলাদা কাজের জন্য আলাদা আলাদা হাতিয়ার তৈরি করা হত বলে মনে করা হয়।

         নিয়েনডার্থাল মানুষ শিকার করতে অভ্যস্ত ছিল। ম্যামথ এবং লোমশ গন্ডারের মতো বড়ো আকারের স্তন্যপায়ী প্রাণীদের তারা শিকার করত। তাদের শিকার করা অন্যান্য জন্তুদের মধ্যে রয়েছে অরোখ, বাইসন ইত্যাদি। শিকারের জন্য তারা পাথরের ফলা অথবা গাছের ডাল দিয়ে তৈরি বর্শা ব্যবহার করত। ইংলিশ চ্যানেলের জার্সি দ্বীপের এক প্রত্নক্ষেত্রে দেখা গেছে ম্যামথ এবং গন্ডারকে তাড়িয়ে পাহাড়ের ওপর থেকে ফেলে মেরে দেওয়া হয়েছে। জিব্রাল্টার উপকূলের বেশ কয়েকটি প্রত্নক্ষেত্রে দেখা গেছে মাছ ধরা এবং অন্যান্য সামুদ্রিক প্রাণী শিকারের নিদর্শন। ভ্যানগার্ড (Vanguard) গুহায় একটি উনুনের সঙ্গে 150টি শামুক জাতীয় জলজ প্রাণীর খোলা এবং সিল ও ডলফিনের হাড় পাওয়া গেছে। অর্থাৎ বন্যপ্রাণীর পাশাপাশি জলেও তারা শিকার করতে শুরু করেছিল।


একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

নবীনতর পূর্বতন