গিলগামেশের মহাকাব্য সম্বন্ধে তুমি কী জানো ? এই মহাকাব্যের গুরুত্ব কী ?

 গিলগামেশের মহাকাব্য

গিলগামেশের মহাকাব্য সম্বন্ধে তুমি কী জানো ? এই মহাকাব্যের গুরুত্ব কী ?

         গিলগামেশ ছিলেন সুমেরের পঞ্চম রাজা। তার রাজত্বকালে উরুক শহরের চারপাশে প্রাচীর তুলে শহরকে সুরক্ষিত করা হয়েছিল। গিলগামেশ নামে প্রচলিত কাহিনী গিলগামেশের মহাকাব্যে স্থান পেয়েছে। এই মহাকাব্য সুমের তথা বিশ্ব ইতিহাসে নন্দিত। কারণ এই মহাকাব্যের বিভিন্ন ঘটনার সঙ্গে বিশ্বের বিভিন্ন ঘটনা বিশেষত বাইবেল বর্ণিত কিছু ঘটনার মিল পাওয়া যায়।

       গিলগামেশের নামে অনেক মহাকাব্যিক আখ্যান বা কাহিনি প্রচলিত আছে। এর বেশিরভাগই অসম্পূর্ণ। সবথেকে প্রচলিত যে সম্পূর্ণ কাহিনি তার রচনার সময়কাল প্রচলিত 700 অব্দ। যদিও মূল কাহিনি অনেক পুরোনো এবং তা শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে চলে আসছে। 3000 লাইনে লেখা এই মহাকাব্য 12টি মাটির ফলকে উদ্ধার হয়েছিল আক্কাদীয় শহর নিনেভ থেকে। গিলগামেশ মহাকাব্যের বিষয় এক এক ঐতিহাসিক রাজা গিলগামেশ, যিনি উরুক শহর শাসন করতেন প্রাক্-প্রচলিত অব্দ 2700 নাগাদ। এই মহাকাব্যের প্রধান উপজীব্য বিষয় মৃত্যুর বিরুদ্ধে মানুষের প্রতিবাদ। যদিও কাহিনির শেষে গিলগামেশের উপলব্ধি হয়েছিল যে, মৃত্যু থেকে কারোরই নিস্তার নেই। সুমেরীয়দের চোখে গিলগামেশ এমন এক কিংবদন্তির নায়ক-যিনি আধা মানুষ এবং আধা দেবতা। বন্ধু এনকিছুর সঙ্গে তিনি বহু অভিযান করেছিলেন, যার মধ্যে অমরত্বের সন্ধানও ছিল। যাত্রাপথে তাদের সঙ্গে বহু দেবদেবীর সাক্ষাৎ হয়। বহু শৌর্য-বীর্যের পরীক্ষার মধ্যে দিয়ে তারা অতিক্রান্ত হন। মোকাবিলা করেন বন্যা, মৃত্যু ও নানা অশুভ শক্তির। কিংবদন্তি অনুযায়ী, গিলগামেশের এই ধারাবাহিক অভিযান সুমেরীয় দেবতাদের ক্ষুণ্ণ করেছিল। শাস্তি হিসেবে তার বন্ধু এনকিছুর প্রাণহরণ করা হয়েছিল। গিলগামেশ অমর হওয়ার চেষ্টা করেছিলেন কিন্তু সফল হননি। সিদুরি এই মহাকাব্যের খুব গুরুত্বপূর্ণ এক চরিত্র, যে গিলগামেশকে মেসোপটেমীয় সভ্যতার দর্শন, প্রকৃতি ও ঈশ্বরের সম্পর্ক ব্যাখ্যা করে। গিলগামেশের মহাকাব্যে বিধ্বংসী প্লাবনের কথা আছে। ওল্ড টেস্টামেন্টের মহাপ্লাবনের কাহিনি সেখান থেকেই সংগৃহীত বলে মনে করা হয়।

      গিলগামেশর মহাকাব্য মানব ইতিহাসের অন্যতম প্রাচীন সাহিত্যকর্ম এবং প্রাচীন মেসোপটেমিয়ার সাংস্কৃতিক ও ধর্মীয় ঐতিহ্যের একটি গুরুত্বপূর্ণ দলিল। এই মহাকাব্যটি গিলগামেশের জীবন, তার সাহসিকতা, বন্ধুত্ব, এবং মৃত্যুহীনতার অনুসন্ধান নিয়ে রচিত। এর মধ্যে প্রতিফলিত হয়েছে প্রাচীন মানুষের জীবন ও মৃত্যুর চিরন্তন সংগ্রাম, এবং মানবজীবনের মূল প্রশ্নগুলির প্রতি তাদের দৃষ্টিভঙ্গি।

      গিলগামেশের মহাকাব্য প্রাচীন সভ্যতার মানসিকতা, ধর্মীয় বিশ্বাস এবং সামাজিক কাঠামো সম্পর্কে আমাদের জানতে সাহায্য করে। এটি পরবর্তী সাহিত্য ও সংস্কৃতিতে গভীর প্রভাব ফেলেছে এবং আধুনিক গবেষণায়ও তা প্রাসঙ্গিক। সংক্ষেপে, এই মহাকাব্য মানবজাতির আদিম জ্ঞান, দর্শন এবং সাহিত্যকর্মের একটি মূর্ত প্রতীক।


একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

নবীনতর পূর্বতন