হরপ্পা সভ্যতা ও তার সমকালীন সভ্যতাগুলির মধ্যে বাণিজ্যিক যোগাযোগের উপর মন্তব্য করো।

হরপ্পা সভ্যতা ও তার সমকালীন সভ্যতাগুলির মধ্যে বাণিজ্যিক যোগাযোগ

হরপ্পা সভ্যতা ও তার সমকালীন সভ্যতাগুলির মধ্যে বাণিজ্যিক যোগাযোগের উপর মন্তব্য করো।

      আধুনিককালে গবেষণার ফলে প্রমাণিত হয়েছে যে, বিশ্বের প্রাচীন জাতিগুলি একে অপরের সঙ্গে বিচ্ছিন্ন ছিল না, সেই সুপ্রাচীন কালে স্থলপথে ও জলপথে মানবজাতির গমনাগমন ছিল। প্রাচীন ভারতীয় সাহিত্যে এর বহু উল্লেখ আছে। সুতরাং সেই যুগে প্রতিবেশী জাতিগুলির সঙ্গে সিন্ধু-উপত্যকার জনগণের যোগাযোগ যে ছিল সে বিষয়ে সন্দেহের অবকাশ নেই। পশ্চিম-এশিয়ার অপরাপর দেশগুলির সঙ্গে সিন্ধু সভ্যতার কিছু সাদৃশ্য আছে। প্রাচীনত্ব ও সমৃদ্ধির দিক দিয়ে সিন্ধু সভ্যতা মিশর ও আসিরিয়-ব্যাবিলোনিয়া সভ্যতার তুলনায় কোনো অংশে হীন ছিল না। উন্নত ধরনের নাগরিক জীবন, বিভিন্ন ধাতুর ব্যবহার, চিত্রমূলক বর্ণমালা প্রভৃতি-মিশরীয় ও সুমেরীয় সভ্যতার এই সব বৈশিষ্ট্যগুলি হরপ্পা তথা সিন্ধু সভ্যতায় প্রচলিত দেখা যায়। এর থেকে মনে হয় পশ্চিম-এশিয়ার সভ্যতার সঙ্গে সিন্ধু সভ্যতার ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল।

      মেসোপটেমিয়ার সঙ্গে সিন্ধুবাসীদের জলপথে কিংবা স্থলপথে যোগাযোগ ছিল। কারণ কতকগুলি বিশেষ ধরনের সিন্ধু উপত্যকার সীলমোহর ও অন্যান্য জিনিস সুমেরে আবিষ্কৃত হয়েছে। ঐতিহাসিকরা এই সকল সীলমোহরের সন স্থির করেছেন খ্রিস্টপূর্ব ২৩০০ থেকে খ্রিস্টপূর্ব ২০০০ অব্দের মধ্যে। সুমেরীয় দলিলপত্রে ‘মেলুকা’ (Melukka) নামে এক অঞ্চলের উল্লেখ আছে, সুমের থেকে জলপথে এই অঞ্চলে পাওয়া যেত। ঐতিহাসিকদের অনেকে ‘মেলুকা’ অঞ্চলকে সিন্ধু-উপত্যকা বলে মনে করেন। মেসোপটেমিয়ায় বহু সিন্ধুর সীলমোহর পাওয়া গেছে তা থেকে মনে হয় সিন্ধুর বণিকরা মেসোপটেমিয়ার সঙ্গে ব্যবসা-বাণিজ্য করতো এবং এদের প্রধান পণ্য-সামগ্রী ছিল সূতীবস্ত্র। মেসোপটেমিয়া থেকে ভারতে আমদানি করা হতো মূল্যবান পাথর ও কিছু বিশেষ ধরনের কাঁচামাল। পশ্চিম-এশিয়ার উর, তেল-আসমীর প্রভৃতি অঞ্চলে আবিষ্কৃত কতকগুলি সীলমোহর সিন্ধু-উপত্যকার মতো তোরণ, দেওয়াল-কুলিঙ্গ ও কতকগুলি জন্তুর প্রতিকৃতি দেখে মনে হয় মহেঞ্জোদাড়ো ও মেসোপটেমিয়ার মধ্যে ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ ছিল। ব্যাবিলোনিয়ার জনগণের কাছে কার্পাস ‘সিন্ধম’ (Sindham) নামে পরিচিত ছিল। সম্ভবত সিন্ধু-উপত্যকা থেকে কার্পাস পশ্চিম-এশিয়ায় রপ্তানি করা হতো। সেই যুগে সুমেরীয় সভ্যতার সঙ্গে - সিন্ধু-উপত্যকার জনগণের যোগাযোগ ছিল এবং ‘আক্কাদ’ নামক অঞ্চলে ভারতীয়দের উপনিবেশের অস্তিত্ব পাওয়া যায়। ঐতিহাসিক গর্ডন চাইল্ড-এর মতে সিন্ধুর নগরগুলির শিল্পীরা তাদের পণ্যসম্ভার নিয়ে টাইগ্রীস ও ইউফ্রেটিস্ নদের উপকূলে অবস্থিত বাজারে যেত এবং অপরদিকে, সুমেরীয় কারুশিল্প ও মেসোপটেমিয়ার কিছু প্রসাধনী সামগ্রী সিন্ধু উপত্যকায় নকল করা হতো এরকম প্রমাণ আছে। সেই কারণে জন মার্শাল লিখেছেন – "The Indus valley was the cradle of the Sumerian and later civilization of Western Asia."।



একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

নবীনতর পূর্বতন